Monday, February 4, 2013

শূণ্যতা কি সৃষ্টিশীল?

শূণ্যতা কি সৃষ্টিশীল?
-    শাহাদাতুর রহমান সোহেল


শূণ্যতার চেয়ে বেশী কি আছে সৃজনশীল?
তুমি জানো, শূণ্যতায় সৃজিত হয় শুধুই শূণ্যতা;
শূণ্যের সাথে শূণ্য যোগ দাও  অথবা বিয়োগ,
গুণ কর, ভাগ কর - ফলাফল শূণ্য সর্বদাই,
শূণ্যের উপর কেউ কি নির্মাণ করতে পারে
অলিম্পাস মন্সের মত স্কাইস্ক্রেপার?
গ্রেট রেরিয়ার রীফের মত একুরিয়াম?
শূণ্যতা কি করে হয় সৃষ্টিশীল?
শূণ্যতাতেই সৃষ্টি হয় আশরাফুল মাখলাকাতের
মহান শিল্প-সাহিত্যঃ
বেদনার্ত শূণ্যতাতেই বিঠোফেনের নবম সিম্ফনী,
শাহ্জাহানের বিস্ময় তাজমহল,
অন্ধ হোমারের ইলিয়াড-ওডিসি মহাকাব্য;
তারও চেয়ে অনেক বেশী আমি জানি-
শূন্যতার চেয়ে বেশী কি আছে সৃজনশীল?
শূণ্য থেকেই বিশ্ব বিধাতা সৃষ্টি করেন সারা চরাচর।

Friday, January 18, 2013

Man & Earth

তখন বিস্ময়ে পাথর হয়ে যাই
- শাহাদাতুর রহমান সোহেল

স্রষ্টা সুমহান
সৃষ্টি তার বিশাল-বিচিত্র
বিশ্বময় ছড়িয়ে রয়েছে হাজারো বিস্ময়,
আমাকে বিস্মিত করে
আশরাফুল মাখলুকাত সেই মানুষ
যাদের চোখ আছে, কিন্তু দেখে না
যাদের কান আছে, কিন্তু শুনে না
যাদের মন আছে, কিন্তু তা অলীক চেতনায়
মুখর
তখন আমি বিস্ময়ে পাথর হয়ে যাই
যখন দেখি —
অগণন মানুষের এই পৃথিবী
চলছে তাদেরই নির্দেশনা।

Thursday, January 17, 2013

আত্মার মুক্তি

আত্মার মুক্তি
-শাহাদাতুর রহমান সোহেল


‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখী কেমনে আসে যায়’
দেহরূপী খাঁচার ভিতর আত্মা কি অচিন পাখী?
হাজারো জীবনের অবিরল প্রবাহে
আমার আত্মা উড়ে বেড়ায়
দেশ-দেশান্তরে —
আকাশ-সাগর-পাহাড়-অরণ্য-মরু-
সমভূমি-দ্বীপমালায় উড়ে --- উড়ে চলে
জীবনের আকুল ভালবাসায়:
সাগরের তলায় হাজারো অগ্নিগিরি
লাভা উদ্গীরণে গড়ে তোলে দ্বীপমালা
অসংখ্য জীবনের উচ্ছ্বাসে মুখরিত,
তুমি কি দেখেছো সাগরে ডুবন্ত বিপন্ন মানুষকে
তীরে পৌঁছে দিয়ে ডলফিনের উল্লাস-নৃত্য?
আমাজানের শাখানদী-উপনদীতে ডলফিনেরা
ঝাঁক বেঁধে জেলে নৌকার পিছনে ছুটে চলে;
জেলেরা জাল পাতলে
মাছ তাড়িয়ে নিয়ে আসে জালের দিকে,
কেনিয়ার আকাশে উড়ে যায়
ফ্যামিঙ্গোর ঝাঁক ফুটন্ত পানির হৃদের দিকে
গুল্ম-খাবারের সন্ধানে,
নামিবিয়ার সেন্ডগ্রাউস পাখীরা
মাইল মাইল উড়ে যায় পানির খোঁজে;
পানিতে বসে থেকে ব্লটিং পেপারের মত
পালকে পানি চুষে নেয় –
দূর মরুতে ছানারা আছে পানির অপোয়,
তুমি কি দেখেছো মরণগুহা?
একসাথে শ’ দেড়েক র‌্যাটল সাপ
বাস করে মরণগুহায় হাইবারনেশনে,
চাঁদ উঠে – জোয়ার আসে সাগরে
আর পানিতে লাফিয়ে লাফিয়ে ঝিনুকেরা
নেচে চলে আনন্দ নৃত্য,
ক্যামিলিয়ানরা লম্বা জিহ্বা ছুড়ে কীটপতঙ্গ শিকার করে,
মালয়েশিয়ার জঙ্গলে ফুটে থাকে সবচেয়ে বড় ফুল
রাফলেশিয়া আর্নলডিয়াই:
এভাবে অসংখ্য জীবনের সুরে সুর তুলে
অগণন তৎপরতায় মিশে তৎপর হয়ে
কান্তি-অবসাদে অবশেষে ঘুমিয়ে পড়ি,
কিন্তু আমার আত্মার ঘুম নেই;
স্বপ্নের দেশে ব্যস্ততায় অসংখ্য জীবনে,
জীবনকে এত ভালবাসি বলেই
আমি সেই মৃত্যু চাই
যে মৃত্যুর দরোজা পথে অনিঃশেষ মহাজীবন —
আমি আমার আত্মার পায়ে
লালনের মত কোন বেড়ী দিতে চাই না,
আমি চাই আমার আত্মা আরো মুক্ত হোক,
মুক্ত হোক, মুক্ত হোক, মুক্ত হোক,
মহামুক্তির কাউসার হৃদে সিনান করে পূর্ণ মুক্ত হোক ।।

Wednesday, January 16, 2013

হাঁটা - প্রথম সিরিজ

হাঁটা - প্রথম সিরিজ
            -শাহাদাতুর রহমান সোহেল

॥১॥
কবিরা দেখ কি দারুণ মিথ্যুক হয়-
‘হাজার বছর পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে’
হাজার বছর কি কেউ পথ হাঁটতে পারে?
মৃদু হেসে বললাম-এটা তো মানস ভ্রমন।

হাজার বছর পথ হাঁটার কথা বলতেই
মনে পড়ে গেলো-
আমি তখন কলেজগামী,
ইন্তিফাদার উত্তাল তরঙ্গ মালায়
ইসরাঈল প্রকম্পিত,
সাাৎকার শুনলাম রেডিওতে
শেখ আহমেদ ইয়াসিনের-
ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদার প্রাণপুরুষ,
বললেন-হাজার বছরের পথ চলা
শুরু হয় একটি কদম থেকে;
দীর্ঘ সংগ্রামের অমোঘ মানস প্রস্তুতি;
আমাদের নেতাকে ওরা হত্যা করলো,
রচিত হলো হাজার বছরের এক সেরা কাব্য,
আমাদের পথ সংপ্তি হলো;
আমাদের গন্তব্য এখন নিকটে -
শাহাদাত, শাহাদাত, শাহাদাত -
শাহাদতের পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে
আমরা শীঘ্রই পৌঁছে যাব
আমাদের গন্তব্যে-
নাছরুম মিনাল্লাহি ওয়া ফাতহুন কারীব ।

॥২।।
অনেকেই পথে হাঁটে, কেউ কেউ পথ চিনে
অনেকেই রাতে হাঁটে, আর কেউ হাঁটে দিনে
কারো কারো অবিরাম রাত-দিন হাঁটাহাঁটি
তবু কেন ধ্বসে যায় জীবনের সব ঘাঁটি?
একা একা পথে হাঁটা নিরাপদ নয় জানি
সন্ত্রাসী সময়ের বিপদের কানাকানি,
দশে মিলে হাঁটো যদি সেখানেও কোন্দল
পথ-ঘাট ডুবে যায়- সব খানে নামে ঢল,
হাঁটা ছেড়ে বসে যাই তাই কিবা হয় বলো?
পরিণতি-পথ চিনে চলো চলো পথ চলো ।

।। ৩।।
বানর যেমন হেঁটে চলে
হাতে পায়ে হাঁটতে হলে
মানুষ কি আর মানুষ হত?
সোজা উচুঁ তালের মত
সব মানুষে হেঁটে চলে
তাই মানুষের বুদ্ধি বলে-
সৃষ্টি-সেরা মানুষ হল -
মাথা উচুঁ হেঁটে চল ॥

।। ৪ ।।
মানুষ কি দু’ পেয়ে জন্তু?
জানোয়ার জানি চার পায়ে হাঁটে,
পেঙ্গুইন পাখিরা হাঁটে মানুষের মত,
চড়–ই পাখীরা ভূমিতে লাফিয়ে হাঁটে,
পিঁপড়ারা হাঁটে সারি বেঁধে
খাবার আহরণে অথবা স্থানান্তরে
ফেরোমেন ছড়ানো পথ ধরে,
গলদা চিংড়িরাও পিঁপড়ার মতই
সারি বেধে হাঁটে দেশান্তরী হতে;
কোথাও কোথাও সাগরের তলদেশে
লাখো চিংড়িকে
এভাবে হাঁটতে দেখা যায়,
চিংড়িরা পিছনেও ছুঁটতে জানে,
কাকড়ারা হাঁটে পাশ বরাবর,
হরিণ-গবাদি পশুর ছানাদের
নাচতে নাচতে হাঁটতে দেখা যায়,
গ্রাম্য পথ ধরে সদ্য কিশোরীর
নাচতে নাচতে হাঁটতে দেখার স্মৃতি
মনে অপূর্ব মাধুর্য ছড়ায়ঃ
তোমরা জানো, মানুষ হাঁটে
সম্মুখ পানে-
কিন্তু আমি প্রতিদিন
অসংখ্য মানুষকে পিছনে হাঁটতে দেখি;
তাদেরকে তুমি যদি বলো সম্মুখে হাঁটতে
তারা তোমাকেই বলবে পশ্চাদগামী।
                   
।। ৫ ।।
হাঁটা থেকে মানুষের চরিত্র বুঝা যায়ঃ
আত্মবিশ্বাসী হাাঁটে মাথা উচু দৃঢ় পদপে,
হতাশাগ্রস্থ হাঁটে কান্ত-শ্রান্ত,
নারীরা হাঁটে ধীর লয়ে,
শান্ত-শিষ্ট মানুষেরা হাঁটে শান্তির সাথে
যথাসাধ্য কোলাহল এড়িয়ে;
গর্বিত প্রতাপশালী মানুষেরা হাঁটে
উদ্ধত গর্বে জমিন কাঁপিয়ে;
জমিনকে তারা কি বিদীর্ণ করতে পারে?
ফেরাউন, নমরুদ, চেঙ্গিস, হিটলার-
কত হাজারো প্রতাপশালীরা আজ
দেখো জমিনের নীচে - ব্যর্থ, পরাজিতঃ
দেয়ালে হেঁটে বেড়ানো টিকটিকি দেখো-
এর পূর্ব পুরুষ ডায়নোসরেরা
রাজত্ব করত সারা পৃথিবী,
বিশাল উচুঁ সরীসৃপের দল-
আট-দশ তলা দালানের সমান উঁচু
টিরানো-সরাসরা খরস্রোতা
পাহাড়ী নদী ধরে লাইন করে
হেঁটে যেতো ভয়ংকর গর্জনের সাথে,
কোন কোন ডায়নোসরের লেজের আঘাতেই
জমিন থরো থরো কেঁপে উঠতো -
তাদের সেই প্রতাপশালী রাজত্ব আজ কোথায়?
তাদের বংশধর টিকটিকির দল
তাড়া খেলেই লেজ খসিয়ে
আত্ম রা করে - কি লজ্জাষ্কর পরিনতি!
কেউ কেউ বলে-সর্বংসহা বসুন্ধরা,
আমি বলি - এটা ভুল কথা,
যারা উদ্ধত গর্বে জমিনে বিপর্যয় নামিয়ে আনে
জমিন তাদের অবশ্যই গ্রাস করে নেয়,
শুধু কিছু সময়ের অপো -
দিগ-দিগন্ত জুড়ে আজ সাম্রাজ্যবাদী
শয়তানের চেলারা আল্লাহর বান্দাদের
উপর নিপীড়ণ-নির্যাতন নামিয়ে আনছে;
ইতিহাস সাী,
সাী আল্লাহর কোরআনঃ
“ওয়ামান খাবা মিন কুল্লি জাব্বারিন আনিদ”
“প্রত্যেক উদ্ধত স্বৈরাচারীই ব্যর্থতা বরণ করে”
এ ঘোষণা বাস্তবায়িত হবেই;
কাজেই আমরা হাঁটতে থাকব আল্লাহর পথে,
চিরস্থায়ী কল্যাণের পথে
দৃঢ়তম পদেেপ ইনশাল্লাহুল আজীজ।