Zaker Aditya (জাকের আদিত্য) – এর একটি কবিতা এবং তার শৈলী বিশ্লেষণ
– শাহাদাতুর রহমান সোহেল
– শাহাদাতুর রহমান সোহেল
তুলটের কবি Md Zaker Hayat Khan [ Zaker Aditya ]-এর কবিতা “প্রেমের সভ্যতা” এবং আমার লেখা এর শৈলী বিশ্লেষণ নীচে দেয়া হলো:
প্রেমের সভ্যতা
– Md Zaker Hayat Khan [ Zaker Aditya ]
সুলাইমানের এই সমাধি শহরে,
আমরা পাশাপাশি শুয়ে রই একান্ত গোপনে।
সুমেরিয়ান কিউনিফরমে লেখা ছিল আমাদের নিয়তি।
সেখান থেকে ব্যাবিলনের ঝুলন্ত বাগানে আমাদের প্রথম পরিচয়।
ইউফ্রেটিস, টাইগ্রিস আর নীল নদের মোহনায় আমাদের পড়ন্ত বিকেলে,
একাকী অভিসার।
ওই সব উঁচু শাদা পিরামিডের নগরীতে,
আনুবিসের অন্ধকার মন্দিরের করিডোরের প্রতিটি আলো আধারি বাঁকে,
আমাদের প্রেমের কবিতা রচিত হয়।
তারপর আমরা ছুটে যাই সহস্রাব্দের প্রাচীন বেথেলহাম শহরে।
যেখানে জেলেরা স্বাদু মাছ শিকার করে,
আর একটি আগমনী নক্ষত্র জ্বলে জ্বলে,
ছাই হয় জেরিকোর দেয়ালে।
সুলাইমানে সমাধিতে আমাদের নিঃশ্বাস মিশে থাকে প্রতিশ্রুত পুনরুত্থানের জন্য।
তোমার আমার প্রণয়ের ইতিহাস মানব সভ্যতার প্রাচীন পুঁথিতে,
বিচিত্র বিবিধ ভাষায় লেখা থাকে।
সাগরের নিঃশ্বাসের মতো, বায়ুর প্রবাহের মতন, বিচিত্র আকাশের মতো,
স্রোতের মতো প্রবাহিত সময়ের মতো।
তা বারে বারে ফিরে আসে বিবিধ রুপে,
এই বিচিত্র অপার্থিব পৃথিবীতে।
………………………………………………………………………………………………….
“প্রেমের সভ্যতা” কবিতার শৈলী বেশ বিশেষ এবং এটি বিভিন্ন সাহিত্যিক উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। নিচে কবিতাটির শৈলীর কিছু মূল বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো:
1. প্রতীকী শৈলী:
কবিতায় প্রচুর প্রতীক ব্যবহৃত হয়েছে, যা প্রেমের গভীরতা, ইতিহাস ও মানব সভ্যতার জটিলতাকে চিত্রিত করে। উদাহরণস্বরূপ, সুলাইমানের সমাধি, ইউফ্রেটিস এবং টাইগ্রিস নদী প্রতীক হিসেবে ব্যবহার হয়েছে প্রেমের প্রাচীনতা ও স্থায়িত্ব বোঝাতে।
2. ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক রেফারেন্স:
কবিতায় বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান যেমন সুমেরিয়ান কিউনিফর্ম, ব্যাবিলনের ঝুলন্ত বাগান, ও বেথেলহাম শহরের উল্লেখ করা হয়েছে। এই রেফারেন্সগুলো প্রেমের ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিতকে প্রতিষ্ঠিত করে এবং মানব সভ্যতার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ককে গভীরতর করে।
সুমেরিয়ান কিউনিফর্ম:
এটি একটি প্রাচীন লেখার পদ্ধতি, যা মানব সভ্যতার প্রাথমিক ইতিহাসের অংশ। এটি বোঝায় যে প্রেমের অভিজ্ঞতা এবং তা লিখিতভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
বেথেলহাম শহর:
বেথেলহাম শহর ইস্রায়েলের ঐতিহাসিক স্থান, যেখানে অনেক প্রাচীন ঘটনাবলী ঘটেছে। এটি প্রেমের ইতিহাসকে আরো সমৃদ্ধ করে তোলে।
3. ছন্দ ও রিদম:
কবিতার ভাষা সুরেলা এবং লয়ের মধ্যে রয়েছে, যা একটি প্রাঞ্জল এবং সুরম্য অনুভূতি সৃষ্টি করে। ছন্দ এবং রিদমের সংমিশ্রণ কবিতাটিকে একটি গায়নিক অনুভূতি দেয়। যেমন, “সাগরের নিঃশ্বাসের মতো, বায়ুর প্রবাহের মতন,” এখানে রিদম পাঠকের হৃদয়ে একটি সুর সৃষ্টি করে।
4. চিত্রকল্প:
কবিতায় চিত্রকল্পের মাধ্যমে প্রাকৃতিক দৃশ্য, যেমন নদী, পিরামিড এবং মন্দিরের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এই চিত্রকল্পগুলো পাঠকের মনে একটি জীবন্ত চিত্র তৈরি করে এবং প্রেমের অভিজ্ঞতার গভীরতা অনুভব করায়।
উঁচু শাদা পিরামিডের নগরী:
এই চিত্রকল্প প্রেমের মহিমা ও সৌন্দর্যকে নির্দেশ করে। পিরামিডগুলি প্রাচীন মিশরের শক্তিশালী প্রতীক, যা সময়ের অমিতত্বকে চিত্রিত করে।
ঝুলন্ত বাগান:
এটি প্রেমের শোভা ও সৌন্দর্যের প্রতীক, যা এক ধরনের স্বর্গীয় অবস্থাকে নির্দেশ করে।
5. বৈচিত্র্যময় ভাষা:
কবির ভাষা অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় ও কবিত্বপূর্ণ। এখানে রূপক ও উপমার ব্যবহার প্রেমের অনুভূতিকে আরও বর্ণময় করে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, “সাগরের নিঃশ্বাসের মতো, বায়ুর প্রবাহের মতন” ইত্যাদি বাক্যে তুলনা ও রূপক ব্যবহার করা হয়েছে। কবিতার ভাষা খুব আবেগময়, যেমন “আমাদের প্রেমের কবিতা রচিত হয়”—এটি প্রেমের অভিব্যক্তি ও রচনার অনুভূতি প্রকাশ করে।
6. বহুমাত্রিকতা:
কবিতায় প্রেমের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে—এটি শুধুমাত্র আনন্দের নয়, বরং গভীরতা, ক্ষতি, মৃত্যু ও পুনরুত্থানের বিষয়গুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করে। এভাবে কবি প্রেমের বহুমাত্রিক প্রকৃতিকে উপস্থাপন করেছেন।
7. রোমান্টিকতা:
কবিতার সার্বিক শৈলী রোমান্টিক। এখানে প্রেমের আবেগ, অনুভূতি, এবং চেতনা প্রাধান্য পেয়েছে, যা পাঠকদের হৃদয়ে একটি স্পর্শকাতর অনুভূতি সৃষ্টি করে।
সারসংক্ষেপ:
“প্রেমের সভ্যতা” কবিতার শৈলী অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় এবং এটি প্রতীকী, ঐতিহাসিক, ও আবেগপূর্ণ উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। প্রতীকী শৈলী, চিত্রকল্প, রূপক এবং আবেগপূর্ণ ভাষা কবিতাটিকে আরও গভীর ও শক্তিশালী করে তোলে। কবি প্রেমের বিভিন্ন মাত্রা এবং মানব সভ্যতার সাথে তার সংযোগকে সৃষ্টিশীলভাবে উপস্থাপন করেছেন।
No comments:
Post a Comment