
– শাহাদাতুর রহমান সোহেল
পৃথিবীর সব পার্ক যেন একে অপরের প্রতিবিম্ব,
ঘাসের ভেতর লুকিয়ে আছে হাজার বছর আগের কথা,
বেঞ্চে বসে তরুণ-তরুণীরা কথা বলে,
কিন্তু তাদের ঠোঁট নড়ে না—শুধু আলো বদলায়।
লন্ডনের হাইড পার্কে একটি মেয়ের চুলে ঝুলছে ঘড়ি,
তার পাশে ছেলেটি কফির কাপে ডুবিয়ে রাখছে চাঁদের টুকরো,
তাদের হাসির শব্দে জেগে ওঠে গাছের গায়ে ঘুমন্ত কবিতা।
প্যারিসে আইফেল টাওয়ারের ছায়া নড়ে,
দু’জন হাত ধরেছে—হাতে ধরা নয়, যেন সময়কে বেঁধেছে,
তাদের আঙুলে উড়ে আসে প্রজাপতি,
যা আসলে মানুষের অতীতের স্মৃতি।
ঢাকার রমনায় কুয়াশা ভাসে,
একটি বেঞ্চে বসে তারা—
ছেলেটির চোখে নদী, মেয়েটির চোখে নৌকা,
তারা একে অপরের মধ্যে পার হয়ে যায়।
মস্কোর গোরকি পার্কে বরফের নিচে ফুল ফোটে,
তরুণীর নিঃশ্বাসে জমে যায় এক শব্দ—
“আমরা এখনো আগুন।”
টোকিওর পার্কে সাকুরা ঝরে,
এক জোড়া মুখে নরম আলো পড়ে,
তারা কথা বলে না, শুধু পাপড়ি ছুঁয়ে বলে—
“আমরা একে অপরের আত্মায় জন্ম।”
রোমের ফোয়ারার পাশে ছেলেটি হেসে ওঠে,
তার হাসিতে জলের ভেতর ঘুরে বেড়ায় মাছের স্বপ্ন,
মেয়েটি চুপচাপ নিজের প্রতিচ্ছবি গিলে নেয়,
যেন অজানা কোনো শহরের মানচিত্র।
নিউইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কে
বেঞ্চগুলো নিজেরাই গল্প বলে—
কেউ বলে প্রথম চুমুর কথা, কেউ বলে শেষ বৃষ্টির দিন;
তরুণ-তরুণীরা শোনে, কিন্তু শুনে না,
তাদের কানে এখন কেবল বাতাসের নীরব গান।
রিওর আকাশে সূর্য ঝুলে আছে পেন্ডুলামের মতো,
দু’জন হাসছে, কিন্তু হাসিটা স্থির—
যেন সময়ের পোজ দেওয়া ছবি।
কায়রোর পার্কে মরুভূমির ধুলো ঘুরে বেড়ায়,
ছেলেটির হাতে লুকিয়ে আছে একটি স্যান্ডেল ফুল,
যেটি একসময় ফেরাউনের চোখে লাগানো ছিল—
মেয়েটি বলে, “তুমি আমায় চিনতে পারবে না,
আমি সেই মরুভূমি যার মধ্যে তুমি হাঁটছো।”
ইস্তাম্বুলে গোলাপের গন্ধে দুলছে ছায়ারা,
তারা বসে আছে পাশাপাশি,
কিন্তু মাঝখানে নদী বইছে—
সে নদীর নাম অপেক্ষা।
কলকাতার ময়দানে সন্ধ্যার আভা ছড়িয়ে পড়েছে,
একজন বলল, “এই শহর আমাদের মতো,
ক্লান্ত, কিন্তু এখনো জীবিত।”
সিডনির পার্কে তরুণ-তরুণীরা আকাশের নিচে সিনেমা দেখে,
স্ক্রিনে চলছে তারা নিজেরাই,
তারা জানে না—দর্শকও তারাই।
বার্সেলোনার ঘাসে একজোড়া হাত একত্রিত হয়,
দু’টি হাত মিলে যেন একটি ফুলের কাণ্ড,
যার গন্ধে আকাশে বৃষ্টির রেখা আঁকা হয়।
রোমান্টিক নয়, তবু অদ্ভুতভাবে কোমল,
তারা একে অপরের চুলে আঙুল চালায়
যেন পৃথিবী মেরামত করছে পৃথিবীকে।
সব পার্কে একই রকম দৃশ্য—
একজন কথা বলছে বাতাসে, অন্যজন শুনছে আলোতে,
আর সবুজ পাতার নিচে ঘুমিয়ে আছে শব্দ—
যা একদিন কবিতা হবে।
চাঁদ আজ এক বিশাল বেঞ্চ,
যেখানে পৃথিবীর সব তরুণ-তরুণী বসে আছে—
হাতের উপর হাত,
চোখের মধ্যে গ্যালাক্সি,
আর তাদের হৃদয় থেকে ছড়াচ্ছে অদ্ভুত নীল ধোঁয়া,
যা আসলে ভালোবাসার শ্বাস-প্রশ্বাস।
তারা সবাই চুপচাপ তাকিয়ে আছে ভবিষ্যতের দিকে—
যেখানে পার্ক নেই, কিন্তু
প্রত্যেক মন এক একটি বেঞ্চ,
আর প্রতিটি নিঃশ্বাস এক একটি আলিঙ্গন।
Comments on Social Media:
অসাধারন ”ঘাসের ভেতর লুকিয়ে আছে হাজার বছর আগের কথা”…….শুভকামনা
— কবি জান্নাতুল ফিরদৌসী
অসাধারণ ❣️❣️❣️
— কবি সোহেল নেওয়াজ
অনিন্দ্য, অবাস্তব সুন্দর…..
— কবি সোয়াইব আবীর
অসাধারণ
— কবি জাকের আদিত্য
মানব-অনুভূতির বিশ্বজনীনতার চমৎকার কাব্যিক প্রকাশ
— কবি প্রিথুলা জামান
অসামান্য অনুভূতির নান্দনিক প্রকাশ হয়েছে কবিবন্ধু… যান্ত্রিক জগতে বিশ্বাস, নির্ভরতা, আশ্রয়ের অকৃত্রিম একটি চিত্র যেন মনে জাগ্রত হলো এই লেখাটি পাঠে…
— কবি পারভেজ শিশির
এক কথায় অসাধারণ! শুধু এটুকু বললে আমার মতে অসম্পূর্ণ হবে – একবিতা বিশ্বকাব্যে বিরল।
— কবি শায়েরুল ইসলাম
কবি শাহাদাতুর রহমান সোহেলের এই কবিতাটি আধুনিক প্রেমের এক দার্শনিক চিত্রায়ন। এটি বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন পার্কের মাধ্যমে দেখায় যে প্রেম একটি সার্বজনীন চেতনার প্রতিবিম্ব। "কফির কাপে চাঁদের টুকরো" বা "ইস্তাম্বুলের অপেক্ষা নদী"র মতো পরাবাস্তব চিত্রকল্পগুলি ইঙ্গিত করে যে, সম্পর্কগুলো সচেতন যুক্তির চেয়েও অবচেতনের গভীরে প্রোথিত। কবিতাটি শেষে এসে মনকে বেঞ্চে পরিণত করে এবং প্রতিটি নিঃশ্বাসকে আলিঙ্গন হিসেবে ঘোষণা করে, যা বাহ্যিক বাস্তবতা থেকে অভ্যন্তরীণ সত্যের দিকে মানব আত্মার এক উচ্চতর যাত্রাকে নির্দেশ করে। নিঃসন্দেহে এটি একটি গভীর তাৎপর্যপূর্ণ এবং স্বপ্নিল কবিতা। ✨
- কবি আবু সাঈদ রবি
No comments:
Post a Comment