
একটি পরাবাস্তব কবিতা:
হাঁটার স্বপ্নলিপি
– শাহাদাতুর রহমান সোহেল
– শাহাদাতুর রহমান সোহেল
একজন মানুষ হাঁটে—তার মাথার ওপরে ঘুরে বেড়ায় এক পাখির ছায়া,
যেন সে মস্তিষ্ক নয়, ডানার ভাষায় চিন্তা করে, দিকনির্দেশ পায় পাখির পালকের ফিসফাসে;
জুতার নিচে গলে যায় নিঃশব্দ ইতিহাস,
যা প্রতিটি পদক্ষেপে বালুর মতো ঝরে পড়ে—
বিলীন হয় যুগের ধুলো, অথবা কারো অসমাপ্ত প্রার্থনা।
ঘোড়ার গন্ধ ছুটে চলে বাতাসের গায়ে,
কুকুরের শোঁকার ভেতর দিয়ে প্রসারিত হয় অনাগত বিপদের ছায়া;
আর বাতাসে হঠাৎ ছড়িয়ে পড়ে গলিত রক্তের ধ্বনি,
যা পিঁপড়ার সারিতে জাগিয়ে তোলে এক হারিয়ে যাওয়া শহরের প্রতিচ্ছবি।
তার পা বেঁকে যায় সাপের মতো—বক্র, শীতল, কুসুম রহস্যে আচ্ছন্ন,
জিভ বের করে গিলে ফেলে দিগন্তের আলোছায়া,
আর কাঁধ বরাবর এক কবুতর লাফাতে লাফাতে নির্মাণ করে অস্পষ্ট সড়ক,
যার প্রতিটি ঠুকরে জন্ম নেয় নতুন দিকনির্দেশ,
পথ ও ভ্রান্তি যেখানে হাত মিলিয়ে হাঁটে।
তার পেছনে হাঁস দুলে চলে—এক ভুল জন্মের নীরব প্রতিধ্বনি,
মাকড়সার পায়ের মতো সূক্ষ্ম আঁচড়ে সে বুনে চলে রাতের অদৃশ্য জাল,
প্রতিটি গিঁটে বাঁধা পড়ে কথা না-কহা অপরাধ, পুরোনো প্রেম, অথবা এক বিস্মৃত আবাস।
সে থামে না—কারণ তার থেমে থাকা মানেই গতি,
নামহীন এক গন্তব্যের দিকে ধাবমান,
যা তার জন্মগত অভিশাপ নয়, বরং এক গোপন ইবাদতের শুদ্ধ ফর্মুলা।
ছায়া নয়, ছায়ার ছায়াও হাঁটে তার আগে,
এক ঘোলা প্রতিবিম্ব, যা ধ্বংসের দিকে পা ফেলে—
গলির কোণে পড়ে থাকে কোনো পুরোনো হাঁটার হাড়,
হয়তো তার পিতার, কিংবা অনাগত সন্তানের।
সে হাঁটে—কারণ হাঁটতে হাঁটতেই সে খোদার সঙ্গে বোবা সংলাপ রচনা করে,
তার পায়ের নিচে বাজে এক অদৃশ্য নুপুর—
যার প্রতিটি শব্দ সকল শব্দের প্রভুর নিঃশব্দ মন্ত্রের মতো।
পেছনে কেউ দুলে চলে—এক মৃত পাখির ছায়া,
হয়তো সে নিজেই, হয়তো কোনো পূর্বপুরুষের অভিশপ্ত স্মৃতি,
যে জন্মের আগেই তার ভবিষ্যৎকে অভিশাপ দিয়েছিল।
আকাশে ঝুলে থাকে ঘোড়ার খুরের ছায়া—
নড়ে না, হাঁটে না—শুধু অপেক্ষায় ঝুলে থাকে থেমে থাকা সময়ের মতো;
আর মানুষটি হাঁটে… হাঁটে… হাঁটে… সে বৃত্তে ঘোরে না—
সে হাঁটে এক সর্পিল আয়নার গর্ভদেশে,
যেখানে প্রতিটি বাঁকে তার মুখ ফিরে আসে, বিকৃত হয়,
আবার হারিয়ে যায় আত্মার অন্ধকারে:
প্রতিটি আঁধার শেষে জেগে উঠে নতুন জীবন – আলো, আলো আর কর্মের প্রবাহ।।
No comments:
Post a Comment