কবিতার জন্মকথা
– কবি আবদুল মান্নান সৈয়দ, তারিখ: ১৯-০৯-২০০৯
………………………………………………………………………
একটি প্রেমের কবিতার সঙ্গে আবার তার টীকাভাষ্য লিখতে হবে এক টুকরো। ডায়েরি খুঁজে কবিতা পাওয়া গেল একটি। কিন্তু কবিতা সৃজন আর কবিতার বিশ্লেষণ বোধহয় সম্পূর্ণ বিরোধী বিষয়। বিশেষত নিজের রচনার প্রেক্ষিত আর ভাবনাবেদনা কে কবে ব্যাখ্যা করতে পেরেছে! রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং একবার প্রমথনাথ বিশীকে লিখেছিলেন এ রকম—কবিতা লেখবার সময় নিশ্চয় একটা কিছু বলতে চেয়েছি, কিন্তু এখন তা আর মনে নেই, এখন তোমাদের মতো অধ্যাপকদের কাজ হচ্ছে এর গভীরার্থ খুঁজে বের করা!—লিরিক কবির কাজই তো পলায়মান মুহূর্তকে বন্দী করা। কবিতা প্রণীত হয়ে যাওয়ার পরে কবি-পাঠক-সমালোচক সকলেই এক কাতারে দাঁড়িয়ে আছেন। আমার পরম শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদ চার দশকেরও আগে প্রকাশিত আমার প্রথম কবিতা এই জন্মান্ধ কবিতাগুচ্ছ (১৯৬৭) জিজ্ঞেস করেছিলেন সস্নেহে—জন্মান্ধ কবিতা বলতে তুমি কী বুঝিয়েছ?—আমি জবাব দিতে পারিনি।— কবি ব্রাত্য রাইসু অনেক দিন ধরে বলছেন আমাকে, আমার মাছ সিরিজ (১৯৮৪) কবিতাগ্রন্থ সম্পর্কে একটি ভাষ্য রচনা করবার জন্যে। প্রায় বছর তিরিশ আগের ওই বইয়ের কবিতা সম্পর্কে কী লিখব এই মননচিন্তনে স্থির হতে পারছি না বলে এখনো ওই সম্পর্কে কলম ধরতে পারিনি।
এই কবিতা অল্পকাল আগে রচিত বলে কিছু কথা বলতে পারি। সব জানাব কেন?
গত বছর কয়েক প্রেমের কবিতার জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছি। পরিপ্লুত আমি কিন্তু একরকম প্রেমের কবিতা লিখিনি। প্রেমের অভিজ্ঞতার অজস্র স্তর পরিক্রম করেছি। অনেক দিন পরে বীণাবাদিনীর শতদল মঞ্জরিত হয়েছে আমার কবিতায় কবিতায়।
কী অতি দ্রুতই-না আমরা দুজনা স্বর্গখেলনা রচনা করেছিলাম মর্ত্যপৃথিবীতে! নিরাশার গভীর থেকে আমাকে উদ্ধার করেছিলেন যিনি—কবিতায় তার কি ঋণ শোধ করা যায়? ফলত এই কবিতা—এখন লক্ষ্য করছি—আরবি ও হিস্পানি কবিতার ধারা বহন করে হয়ে উঠেছে কাসিদা বা প্রশস্তিকবিতা। আমার প্রেমের কবিতায় ঠিক এ রকম কবিতা নেই বোধহয়।
নিরর্থ স্বপ্নাক্রান্ত সুররিয়ালিস্ট জীবন বয়ে বেড়াচ্ছিলাম। হঠাত্ সোনালি আলো চোখ ধাঁধিয়ে দিল। আমার অস্তিত্বকে অর্থবান করে দিল। বুঝলাম, আমি তো আসলে একজিসেটনশিয়ালিস্ট— অস্তিত্ববাদী। হঠাত্-আলোয় ঝলকানি লেগে সমস্ত মনঃপ্রাণ ঝলমলিয়ে উঠল। নবজন্মের পর শুধু প্রেমিকতায় অন্তরীণ থাকলাম না, বহুস্বরিক পরিপ্রেক্ষিত—নিসর্গ প্রকৃতি ও জনসাধারণ—ধরা দিল নতুন করে।
এই কবিতার উদ্দিষ্টাকেও এই কবিতা পড়ে শুনিয়েছি। তিনি বলেছেন—কী কবিতা লিখছিস্ তুই, তা তুই জানিস না। আমি দেশোয়ালি ভাষায় বলেছি—তুই আমাকে কী করিচিস্, তা তুই জানিস্ না!
Source: দৈনিক প্রথম আলো
No comments:
Post a Comment