একটি রুবাইয়াত: পাপিয়া কি জেগে রয়? – শাহাদাতুর রহমান সোহেল

একটি রুবাইয়াত:
পাপিয়া কি জেগে রয়?
– শাহাদাতুর রহমান সোহেল

শ্রাবণের বর্ষণে সারারাত ঘুমময়,
রিমিঝিমি সঙ্গীতে পাপিয়া কি জেগে রয়?
নির্ঘুম বাতাসে বইছে সুরের পিপাসা,
ভেজা আকাশে যেন বিষাদ অবসুর বয়।

Comment on social media:

এই রুবাইয়াতে শাহাদাতুর রহমান সোহেল প্রকৃতির অন্তর্গত এক গভীর অনুভূতির চিত্র তুলে ধরেছেন। বর্ষার প্রেক্ষাপটে লেখা এই কবিতায়, “শ্রাবণের বর্ষণে সারারাত ঘুমময়”—এটি শুরু থেকেই পাঠকের মনে এক শান্তিময় অথচ দুঃখিত আবহ তৈরি করে। ঘুমের মধ্যে প্রকৃতির নিকটে থেকে, আমরা যেন সেই অনুভূতির মধ্যে প্রবাহিত হচ্ছি।

“রিমিঝিমি সঙ্গীতে পাপিয়া কি জেগে রয়?”—এখানে পাপিয়ার জাগরণের প্রশ্নে কবি আমাদের মনে এক রহস্যের জন্ম দেন। পাপিয়া, যে প্রাণীটির সুর আমাদের মনে আনন্দ ও বিষাদের সংমিশ্রণ তৈরি করে, সে কি সত্যিই জেগে আছে? এই প্রশ্নের মধ্য দিয়ে কবি প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের অনুভূতির সম্পর্ককে আরও গভীরতর করে তুলছেন।

“নির্ঘুম বাতাসে বইছে সুরের পিপাসা”—এটি একটি অত্যন্ত সুন্দর ও চিত্রাত্মক পঙতি। এখানে বাতাসের নীরবতা এবং সুরের আকাক্সক্ষার এক আশ্চর্য সমন্বয় ঘটেছে। বাতাস যেন নিজে থেকেই গান গাইতে চাইছে, যা আমাদের মনে মুগ্ধতা জাগায়। সেই সাথে, “ভেজা আকাশে যেন বিষাদ অবসুর বয়”—এটি প্রকৃতির বিষণ্ণতা ও গভীরতা প্রকাশ করে, যেন আকাশের জলীয় রূপে মানব মনের বিষাদও প্রতিফলিত হচ্ছে।

কবিতার প্রতিটি পঙতি যেন একাধিক স্তরের অনুভূতি প্রকাশ করে। এই রুবাইয়াতের মাধ্যমে কবি পাঠককে প্রকৃতির মাঝে ডুবিয়ে দেন, যেখানে প্রেম, দুঃখ, আশা এবং বিষাদ— all mingled in a delicate balance. এটি শুধু একটি কবিতা নয়; এটি অনুভূতির একটি যাত্রা, যেখানে আমরা ourselves এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আবিষ্কার করতে পারি।

কবিতার সহজ ও সুললিত ভাষা আমাদের হৃদয়ে বেজে ওঠে, এবং প্রকৃতির মধ্যে নিহিত রহস্য ও মাধুর্যকে আরও একবার চিনে নিতে উৎসাহিত করে। সত্যি, এটি একটি অসাধারণ সৃষ্টি…!

কবি পারভেজ শিশির
(আনোয়ার পারভেজ নূর শিশির)


রুবাইয়াত: রুবাইয়াত হলো চার লাইনের একটি বিশেষ ধরনের কবিতা, যা মূলত ফার্সি সাহিত্য থেকে উদ্ভূত। প্রতিটি রুবাইয়াত চারটি পঙক্তি নিয়ে গঠিত, যেখানে প্রথম, দ্বিতীয় এবং চতুর্থ লাইনের ছন্দ মিল থাকে (AABA ছন্দমালা অনুসারে)। রুবাইয়াতের বিষয়বস্তু সাধারণত জীবন, প্রেম, প্রকৃতি, আধ্যাত্মিকতা, এবং দার্শনিক চিন্তাধারা নিয়ে আবর্তিত হয়। বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলাম রুবাইয়ের ছন্দ ও রূপকে নতুন মাত্রা দিয়েছেন। পাশাপশি, ওমর খৈয়ামের রুবাইয়াতের অনুবাদ বাংলা কাব্যজগতে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। রুবাইয়াতের বিশেষত্ব হলো এর সংক্ষিপ্ততা এবং গভীর ভাব প্রকাশের ক্ষমতা।

No comments:

Post a Comment