
সে ফলের নাম "আম" — উচ্চারণেই যেন এক রসনাময় ধ্বনি। রোদের গায়ে গলে যাওয়া মধুর মতো, একটুখানি কামড়েই জিভে নামে উৎসব। এই ফল শুধু স্বাদের জন্য বিখ্যাত নয়, বরং একে ঘিরে গড়ে উঠেছে সভ্যতার ছায়াঘেরা ইতিহাস, সংস্কৃতির গীতিময় গাঁথা, অর্থনীতির পাকা বুনন এবং কৃষির সোনালি প্রতিশ্রুতি।
🌳 বাংলার মাঠে মাঠে লতিয়ে ওঠা আমগাছের নিচে দাঁড়ালে যেন মনে হয়—এই গাছ সাক্ষী, কত শত গল্পের, চুক্তির, বিদ্রোহের, প্রেমের, এমনকি স্বাধীনতার। ঠাকুরগাঁওয়ের সূর্যপুরী আমগাছের বয়স দুই শতাব্দীর বেশি, তার শাখা-প্রশাখা নেমে এসেছে মাটিতে, যেন ইতিহাসকে ছুঁয়ে দেখছে সে। আর মেহেরপুরের আম্রকাননে স্বাধীন বাংলার প্রথম সরকার গঠিত হয়েছিল—গাছ তখন শুধু ফল দেয়নি, দিয়েছে স্বাধীনতার ছায়া।
⏳ এখনও বাংলার মানুষ আমের মৌসুমে চাতকপাখির মতো অপেক্ষায় থাকে। হিমসাগর, গোপালভোগ, ফজলি, ল্যাংড়া, সূর্যডিম, আর এখন নতুন রাজা ‘কাটিমন’—যে আম সারা বছর ফল দেয়, দুইবার ফলন দেয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল থেকে শুরু করে রাজধানীর ছাদবাগান পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে এই বারোমাসি আমের জাদু।
💰 তবে আম শুধু খাওয়ার জন্য নয়, বাণিজ্যেরও অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। রাজধানীর বৃক্ষমেলায় যখন ব্রুনাই কিং জাতের আম ঝুলে থাকে ড্রামে, তার দাম চাওয়া হয় ত্রিশ হাজার টাকা! কেউ আবার ছাদের জন্য কিনে নিচ্ছেন থাই কিউ বা চিয়াংমাই জাতের চারা। কেউ আবার নার্সারির সঙ্গে ছয় মাসের পরিচর্যার চুক্তিতে নিচ্ছেন ফলন্ত গাছ—শুধু শখের বশে নয়, বরং একে ভবিষ্যতের সোনার খনির মতো ভাবছেন।
⚠️ বাজারে অপপ্রচারও কম নয়—ইথোফেন বা কারবাইড দিয়ে আম পাকানো নিয়ে আতঙ্ক অনেক। অথচ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব রাসায়নিক বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত মাত্রায় ব্যবহৃত হয়, আর আমের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ তাতে প্রায় অপরিবর্তিতই থাকে। কিন্তু সেই অজ্ঞতাজনিত ভয় কখনও আমাদের বঞ্চিত করে দেয় ভিটামিন, খনিজ ও সুগন্ধি স্নেহ থেকে।
🍃 আমপাতা নিয়েও নতুন সম্ভাবনার আলো জ্বলছে। এখন পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ থেকে কেউ কেউ আমপাতা শুকিয়ে বিক্রি করছেন আমাজনের ই-কমার্সে—চায়ের উপকরণ হিসেবে, আয়ুর্বেদিক ওষুধে কিংবা বায়ো-কম্পোস্টের উপাদানে। প্রাচীন আয়ুর্বেদের ভাষ্যে, আমপাতা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, ডায়াবেটিসে, এমনকি দাঁতের যত্নে দারুণ কার্যকর।
No comments:
Post a Comment