🌿 ঘরের ভিতর একফোঁটা বন – শাহাদাতুর রহমান সোহেল

🌿 ঘরের ভিতর একফোঁটা বন
– শাহাদাতুর রহমান সোহেল

ঘরের কোণে রাখা মানি প্লান্ট,
পাথরের টবে তার পাতাগুলো ঝুলে আছে—
যেন স্নিগ্ধ বিকেলের পরশ বুকে জমিয়ে রাখে:
খুব সাধারণ, কিন্তু আমার চোখে বন।

জানালার ধারে রাখা এলোভেরা,
প্রতিদিন সকালে তাকাই—
জীবনের মতোই ধীরে ধীরে বাড়ে তার ডাল,
কোনো শব্দ ছাড়াই শেখায় ধৈর্যের পাঠ।

একটি পুরনো বোতলে বেড়ে উঠেছে পুদিনা—
রান্নার সময় এক চিমটি পাতা ছিঁড়ি,
ঘ্রাণে ঘরটা ভরে যায়—
ঠিক যেন গ্রাম থেকে আসা কোনো মাটির চিঠি।

রাতের নিস্তব্ধতায়
স্নেক প্লান্ট দাঁড়িয়ে থাকে নিঃশব্দ প্রহরী হয়ে,
বাতাসের বদলে দেয় নিঃশ্বাসে শান্তি,
বিছানার পাশে ছোট বনসাই—
আমার ক্লান্তিকে টেনে নেয় নিরবে।

টেরিরিয়ামে আসলেই একটা বন: 
ঘরের ভিতর বন মানে,
জীবনের মাঝে একটু যত্ন রাখা,
একটু নিঃশ্বাস রাখা,
একটু পৃথিবী রাখা—
আমারই হাতের বানানো ছোট্ট গ্রহ।
🌏💚🌱🌿🌏💚🌱🌿🌲🍃🌼

স্লোগান: সবুজ বিনাশের যুগে প্রতিটি ঘরে হোক সবুজ বিপ্লব 🌏

🌿 ঘরের ভিতর একফোঁটা বন: কবিতা, শৈলী ও পরিবেশ-চেতনার প্রতিচ্ছবি
- আবু নাবিল

আজকের পৃথিবীতে যখন বন উজাড় হচ্ছে, জলবায়ু বিপর্যয় ঘনিয়ে আসছে, তখন শহুরে জীবনে একটু "সবুজ" ফিরে আনার চেষ্টাকে শুধু শখ বললে কম বলা হয়। এই প্রেক্ষিতে কবি শাহাদাতুর রহমান সোহেল তাঁর কবিতা “ঘরের ভিতর একফোঁটা বন”-এ এমন এক ভিন্নতর সবুজ চেতনার বার্তা দিয়েছেন, যেখানে একটি মানিপ্লান্ট বা পুদিনা গাছ হয়ে উঠেছে প্রতীকি বন, আর একটুখানি যত্ন যেন হয়ে উঠেছে প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার নীরব বিপ্লব।

🪴 একটি টেরারিয়াম: ঘরের ভেতর একফোঁটা বন
এই কবিতায় বারবার উঠে এসেছে ইনডোর প্ল্যান্ট বা ঘরের গাছের কথা। বিশেষভাবে কবিতার শেষাংশে “টেরারিয়ামে আসলেই একটা বন” বাক্যটি একটি গুরুত্বপূর্ণ চিত্রকল্প হিসেবে আবির্ভূত হয়।
টেরারিয়াম হলো কাঁচের পাত্রে তৈরি একটি ক্ষুদ্র উদ্ভিদ-বসতি, যেখানে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ছোট গাছ ও মস জন্মে। এটি শুধু নান্দনিকতা নয়, বরং ঘরের মাঝে একটি ক্ষুদ্র জীববৈচিত্র্য গড়ে তোলে। এই ধারণাটিকে কবি ব্যবহার করেছেন ব্যক্তিগত যত্ন, প্রশান্তি ও পরিবেশ-সচেতনতার রূপক হিসেবে।

🌱 কবিতার বিষয়বস্তু ও প্রতীক ব্যবহার
কবিতাটি একটি গদ্যকবিতা—যেখানে ছন্দের বাহুল্য নেই, কিন্তু প্রতিটি বাক্যে রয়েছে এক নিঃশব্দ চিত্রকল্পের সৌন্দর্য। এখানে ব্যবহৃত গাছগুলো শুধু উদ্ভিদ নয়, মানবজীবনের অনুভূতির রূপান্তর:
মানিপ্লান্ট: স্নিগ্ধ বিকেলের পরশ—ঘরের এক কোণে শীতলতার প্রতীক।
এলোভেরা: ধৈর্যের প্রতিচ্ছবি, ধীরে ধীরে বাড়ে জীবনের মতো।
পুদিনা: স্মৃতির ঘ্রাণ হয়ে আসে, যেন গ্রাম থেকে আসা মাটির চিঠি।
স্নেক প্লান্ট: রাত্রিকালীন প্রহরী—ঘুমের পাশে নিঃশব্দ উপস্থিতি।
বনসাই: ক্লান্তি টেনে নেওয়ার মৃদু ছায়া।
প্রতিটি উদ্ভিদের মাধ্যমে কবি শহুরে জীবনের একাকীত্ব, ক্লান্তি ও শূন্যতার মাঝে একধরনের সবুজ প্রশ্রয় সৃষ্টি করেছেন।

🎨 শৈলী ও নির্মাণ-কৌশল
এই কবিতার সবচেয়ে বড় শক্তি তার সাধারণতাকে অসাধারণ করে তোলার ক্ষমতা। কবি এমন এক ভাষা ব্যবহার করেছেন যা সহজে পাঠযোগ্য, আবার গভীরভাবে হৃদয়গ্রাহী। শব্দের বাহুল্য নেই, অথচ প্রতিটি পঙ্‌ক্তি একটি আলাদা দৃশ্যপট তৈরি করে।
গদ্যকবিতার রীতি অনুসরণ করলেও প্রতিটি স্তবকের শেষে পাঠক যেন একটুখানি দম নেয়—একটু “নিঃশ্বাস রাখা”, যেমন কবিতাতেই বলা হয়েছে।

🌍 পরিবেশবাদী বার্তা ও সমাজতাত্ত্বিক তাৎপর্য
এই কবিতাটি কেবল একটি বর্ণনামূলক রচনা নয়, বরং এক প্রকার পরিবেশ-সচেতন কাব্যিক ম্যানিফেস্টো। আজকের গ্রহ যেখানে বৈশ্বিক উষ্ণতা, দুষণ, বন ধ্বংসের আতঙ্কে ডুবে আছে, সেখানে কবি নিভৃতে ডাক দিয়েছেন ঘরের ভিতরেই বন গড়ার।
এই “বন” গড়ার চেষ্টাটি নিছক শখ নয়—এটি একটি প্রতিরোধ। “জীবনের মাঝে একটু পৃথিবী রাখা”—এই বার্তায় কবি ব্যক্তি উদ্যোগের মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা তুলে ধরেছেন।

🧭 সমাপ্তি: এক হাতে গড়া ছোট্ট গ্রহ
শেষ পঙ্‌ক্তিগুলোর মতো করে বলা যায়—
“ঘরের ভিতর বন মানে,
জীবনের মাঝে একটু যত্ন রাখা,
একটু নিঃশ্বাস রাখা,
একটু পৃথিবী রাখা—
আমারই হাতের বানানো ছোট্ট গ্রহ।”
এই কবিতায় কবি কেবল একটি ছায়াবাদী সৌন্দর্য নির্মাণ করেননি, বরং পরিবেশবাদ, স্মৃতি, মনস্তত্ত্ব ও জীবনের স্নিগ্ধ দিকগুলোকে গেঁথেছেন একটি টেরারিয়ামের মতো—ছোট, সযত্ন, কিন্তু একটুখানি পৃথিবী বহনকারী।

🌿 প্রস্তাবিত স্লোগান:
🌏 সবুজ বিনাশের যুগে প্রতিটি ঘরে হোক সবুজ বিপ্লব
এটি শুধুমাত্র একটি স্লোগান নয়—এই কবিতার অন্তর্নিহিত বার্তার সংক্ষিপ্ত প্রকাশ।

Comment on Social Media:

আমার ঘরের ভেতরেও এমন একফোটা বন রয়েছে, যেখানে আমি শান্তির পরশ পাই। সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে এর জুড়ী নাই।

- কবি প্রিথুলা জামান